Tuesday, October 11, 2016

আদর্শ জাতিগঠনে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাব্যবস্থা


যদি প্রশ্ন রাখা হয়, ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গনে আজ যে অরাজকতা, আধুনিকতার নামে উঠতি রোমিওদের যে বখাটেপনা, জনসেবা ও দেশপ্রেমের বুলি আউড়ে যে অবাধ দুর্নীতি ও মানব- শোষণ, অগ্রচিন্তার যবনিকায় যে বিবেক-বিধ্বংসী জুয়ার আড্ডা বা সুন্দরী-প্রতিযোগীতার অন্তরালে যে বেলেল্লাপনা, অর্থনীতির ছদ্মবেশে লুন্ঠন ও কুসীদের যে জয়যাত্রা, গনতন্ত্রের আড়ালে যে প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার উপযোগীতা, নারীমুক্তি ও শিল্পকলার মোড়কে যে অবাধ লাম্পট্যের জোয়ার- এর উৎসমূল কোথায়? 

সর্বস্তরের নাগরিকই একবাক্যে শিকার করবেন এ বিষবৃক্ষের কান্ডমূল হচ্ছে অসুস্থ শিক্ষানীতি

যাকে বাল্যকালে দুধের সাথে পানি মিশানোর অংক শিক্ষা দেওয়া হয়, বড় হয়ে তার চর্চিত ভেজাল কার্যক্রমকে হাজারো মোবাইল কোর্ট দিয়েও কি দমন করা সম্ভব?
যে শিশুকে শেখানো হচ্ছে সুদ-কষার গনিত, তার ঘুষ আশ্রিত ভবিষ্যতকে সহস্র দুদকএর বুলডোজার দিয়েও কি বদলানো যাবে?
যেসব শিক্ষানবিশরা ডারউইনএর বানর মনমানসিকতায় বেড়ে উঠবে তাদের কাছ থেকে পশুবৃত্তি ছাড়া অন্যকিছু আশা করা কি অলীক-কল্পনা নয়?
যে প্রজন্মকে ফ্রয়েডএর যৌন মতবাদ বা মারক্সএর বস্তুবাদ গিলানো হয় সে প্রজন্মকে মনুষ্যরূপি সারমেয় কিংবা অন্ধকারের গন্ধমূষিক ছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে?
তাই এরকম শিক্ষানীতির নির্যাসে পুষ্ট পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড-কেম্ব্রিজ-হার্ভার্ড কিংবা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদেরকে কাম-কাতর ক্লিনটন,মানবরক্তপিপাসু বুশ,কুখ্যাত কালা-জাহাঙ্গির কিংবা পাপিষ্ঠ জয়নাল হাজারীদের মত আত্মবিক্রীত কিছু ক্রীতদাসই উপহার দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে।

এ জাতীয় নীতিহীন শিক্ষানীতির কল্যাণে আজ দেশ পাচ্ছে অজস্র বৃদ্ধাশ্রম,বেঙের ছাতার মতো গজাচ্ছে মাদক-পুনর্বাসন কেন্দ্র, জমে উঠেছে বেবী-কেয়ার সেন্টার এর রমরমা ব্যবসা, নাইটক্লাবপতিতালয় নামের লানতের গুদাম।

এ শিক্ষানীতির বিষ-ইন্ধনে লালিত-পালিত জ্ঞানপাপীরা আজ নামাজকে বিলুপ্ত করতে মেডিটেশনএর প্রচলন করছে,মানুষের ঈমান”কে দুর্বল করার নিমিত্তে বাজারজাত করছে কোয়ান্টাম মেথড,ইসলামের যাকাত ব্যবস্থাকে নির্মূল করতে গঠন করছে নানান তহবিল, রোজার মত বিধানকে হেয় করছে হিমু দিবস, উপবাস দিবসএর ফানুস উড়িয়ে, হজের গুরুগাম্ভীর্যকে ধ্বংস করছে রংবেরঙের পর্যটনকেন্দ্রের মরীচিকা আর হানিমুন-ভ্রমন প্যাকেজের পসরা সাজিয়ে।
কিন্তু পরিত্রাণ কোথায়? নিঃসন্দেহে একটি নিখুত ও অনুপম শিক্ষানীতিই পারে একটি আদর্শ জাতি গঠন করতে, যে শিক্ষানীতি বিশ্বকে উপহার দিয়েছিলো আবু বকর (রাঃ)এর মতো বিজ্ঞ সুশাসক,উমার ও ওমর বিন আব্দুল আযীয(রাঃ)এর মতো ন্যায় বিচারক,খালিদ বিন ওয়ালিদ ও সাদ বিন আবি ওয়াককাস(রাঃ)এর মতো বীর সিপাহসালার,ফাতিমা কি আয়েশা (রাঃ)এর মতো পূত পবিত্র মহীয়সী নারী।


যে শিক্ষানীতি মানুষের স্বকপোলকল্পিত তার স্বাভাবিক পরিনাম ও অবধারিত পরিনতি হচ্ছে পুনঃপুনঃ পরিমার্জন,বারংবার পরিবর্ধন ও অশ্বডিম্ব সদৃশ বায়বীয় ফলাফল। মানবসন্তানের জন্য উপযুক্ত শিক্ষানীতি হবে তাঁরটাই যিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমগ্র মানবের রক্ষক ও শিক্ষক...সেই মহান রব্বুল আলামীনের অবিসাংবাদিত ও সুনির্ধারিত সুনিপুন শিক্ষানীতি।

Monday, October 10, 2016

মিডিয়ার সাহায্যে ইসলামের দাওয়াত : আগামীর পথপরিক্রমা



চরম বৈরী পরিবেশে ইসলামের অঙ্কুরোদম হওয়ার পরও তৎকালীন মক্কায় ইসলামী মিডিয়া ছিলো অনুপম ও যথেষ্ট চৌকস।তখন সাহাবা(রাঃ)দের সংখ্যা ছিলো বড়জোর ১৫-২০ জন।ইসলাম বিরোধী শক্তি বলতে আমর ইবনে হিশাম ওরফে আবুল হিকাম কেই বুঝাতো।

একদিন কোন কারনে তার আলোচনা উঠতেই নবীজি(সঃ)বললেন"সে তো আবুল হিকাম নয়, আবু জাহেল"।ব্যস,মক্কার অধিকাংশই আবু জাহেলের সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়লো তার নতুন নামটি।সেই থেকে "আবুল হাকাম" কে কেউ চেনেনা।"আমর বিন হিশাম" নামটিরও চিরবিলুপ্তি ঘটলো।

এ-ই ছিলো ইসলামী মিডিয়ার অতুলনীয় প্রভাব।অপরদিকে কাফেররাও বসে ছিলনা,'দারুন নাদওয়া' তে তারা মিলিত হয়ে আলোচনা-গবেষনা করত মুহাম্মদ(সঃ) কে উপাধি দেয়ার জন্য।কখনো পাগল,কখনো গনক উপাধি ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাতো।কিন্তু তাদের সে আশাতেও গুঁড়ে বালি।ইসলামী মিডিয়ার প্রধান সংবিধান আল-কোরান সেই অপপ্রয়াসকে ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে পদে পদে।

প্রশ্ন হচ্ছে,একেবারে তৃনমূল পর্যায়ে এই মিডিয়া এতো প্রানশক্তি কোথায় পেয়েছিলো?কিভাবে রচনা করেছিলো সর্বজনবিদিত ইতিহাস?
গভীরভাবে ইতিহাস লক্ষ্য করলে বুঝা যায়,মদীনার সেই বিস্ময় রাষ্ট্রই আসলে বিশ্ব মিডিয়ার প্রধান সূতিকাগার,প্রথম প্রতিষ্ঠান।যে মিডিয়ার দর্পণে মানবতা দেখেছিলো ন্যায়ের প্রতিবিম্ব,যার আলোকবর্তিকায় ভিড়েছিলো হাজারো সত্যের নাবিক।হকের প্রসার ও বাতিলের সংহার করাটাই ছিলো যে মিডিয়ার অদ্বৈত লক্ষ্য।

কিন্তু আজ আমরা যারা ইসলামী প্লাটফরমে নানাবিধ কাজে করমরত,তারা মিডিয়াকে ব্যবহার করে হকের প্রচারে যতটা না চুপচাপ,বাতিলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারচেয়ে বেশি নিশ্চুপ।
অনেক কাল পরে ইসলামী মিডিয়ার শবদেহে আবার প্রাণসঞ্চার হচ্ছে,জাগৃতি এসেছে জীবন্মৃত মিডিয়া-কোষে। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল বলেছিলেন "ফকীহ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি মানুষ কে সমাধানের পাশাপাশি প্রচলিত হারামের বিপরীতে সুন্দর একটি হালাল বিকল্প উপস্থাপন করেন"। তাঁর আরো একটি অমূল্য বাণী হচ্ছে-"এই উম্মতের শেষাংশকে সংশোধন করা সম্ভব,প্রথমাংশকে যা দিয়ে সংশোধন করা হয়েছিলো একমাত্র তা দিয়েই"।

এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে আমরা এই রচনায় কিছু পথ-প্রনালীর উন্মোচন করার প্রয়াস পাবো-যা আমাদের ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা কে আরো সুগম ও সফল করবে।।

আমরা মিডিয়ার নানারকম সংজ্ঞা পাই,কেউ বলছে মানুষের পারষ্পরিক যোগাযোগের মাধ্যম হল "মিডিয়া"।কারো মতে,"আকাশের আন্তজাল,মাটি ও সাগরতলের ক্যাবল জাল,এবং কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ক্ষণিকের ব্যবধানে যে যোগাযোগ সৃষ্টি করা যায় তা-ই মিডিয়া"।(Communication:page.5,France.AFAA.)

মিডিয়ার প্রকারও অনেকে অনেক রকম করেছেন,তবে সামগ্রিক দৃষ্টিতে মিডিয়া ৩ প্রকার।
ক)local বা আঞ্চলিক মিডিয়া।
খ)domestic বা আভ্যন্তরিন মিডিয়া।
গ)international বা আন্তরজাগতিক মিডিয়া।

এ উপাদানগুলো ইসলাম প্রচার ও বাতিলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিভাবে ব্যবহার করা যায় তা আলোচনা করার আগে আমরা দেখবো কিভাবে সমাজমানসে পৌছা যায়।

সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হচ্ছে "সমাজ সেবা"।নবী করিম (সঃ)ঠিক এ পদ্ধতিতেই মানুষের অন্তর জয় করেছিলেন...তাঁর 'আল-আমিন' উপাধি,'হিলফুল ফুযুল' থেকে শুরু করে জীবনবসানের আগ পর্যন্ত সমস্ত করমকান্ডই ছিলো মানবতার নিমিত্তে। অথচ, আজ আমরা আলেমসমাজ সমাজসেবা থেকে অনেক দূরে,বাতিলপন্থিরা ঠিকই তাদের মতবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে সমাজসেবার নামে।কখনো দারিদ্র বিমোচনের নামে, কখনো 'বদলে যাও বদলে দাও'র নামে, কখনো 'ক্ষুদ্রঋণ'র নামে,কখনও বা 'মানবাধিকার'র নামে।কারন,মানুষ চায় তাদের সমস্যার সমাধান,দুঃখের অবসান।

যারা সেই সমস্যা দূরিকরনে ভূমিকা রাখে তারাই মানুষের চোখে সম্মানের পাত্র,তাদের কথাকেই গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি।তাই,সর্বাগ্রে আমাদেরকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করতে হবে।

এখন দেখা যাক কিভাবে মিডিয়ার আলোকে আমরা দাওয়াতের কাজে সমাজসেবাকে ব্যবহার করতে পারি।

আঞ্চলিক মিডিয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন দ্বীনি সমাবেশ ও বিভিন্ন দাওয়াতী কারজক্রম।এতে আরো অভিনব প্রজ্ঞা ও কৌশল এনে দিতে পারে সুদূরপ্রসারী সাফল্য। যখন {وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ} আয়াত নাযিল হল,নবীজি এমনি দাওয়াত দেননি, অভিনব পদ্ধতিতে দিয়েছিলেন যা ইতিহাস!এক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয় তা হল, আমাদের দাওয়াতী কাজগুলো বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে,উচ্চবিত্তরা এ থেকে লাভবান হতে পারেনা,কারন তারা সাধারন জনসমাবেশে উপস্থিত হতে কুন্ঠাবোধ করে।তাই কমবেশি সিম্পোজিয়াম,বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গোল-টেবিল বৈঠক,ধনীদের নিয়ে বিভিন্ন আসরের আয়োজন করাটাও আবশ্যক।নবী (সঃ) ও খাবারের আয়োজন করে সমাজের গণ্যমান্যদের দাওয়াত করে ইসলামের বাণী পৌঁছে দিতেন।

এছাড়াও এলাকায় এলাকায় রক্তদান কর্মসূচি,দুর্গত এলাকায় ত্রান কার্যক্রম,ছোটদের মাঝে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আওতায় ইসলামী দাওয়াতী কাজ চালিয়ে নেওয়া অনেক বেশি সাফল্যব্যঞ্জক।

শহরাঞ্চলে দেখা যায় অনেক বিলবোর্ড ভাড়া করে এনজিও গুলো তাদের চিন্তাধারা গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।জন্মনিয়ন্ত্রনের আহবান,আধুনিকতার নামে বেলেল্লাপনার নিমন্ত্রন থেকে শুরু করে নানাবিধ অপকর্মের লিপ্সা মানুষের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।এছাড়াও অনেক দেওয়ালে ফ্রি পত্রিকা সাটিয়ে দেয়া হয়,বাম্পন্থিরা দেওয়ালে ধর্মবিরোধী বাক্য লিখে চলেছে।আমাদেরকে এসব স্থান দখল করতে হবে।আমরা বিলবোর্ড,দেওয়ালে কুরান-হাদীসের বাণী, ইসলামী পত্রিকা দিয়ে এর মোক্ষম জবাব দিতে পারি।

বর্তমানে এরা একধাপ এগিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে নানান বিষয়ে মেসেজ পাঠাচ্ছে,ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে উদবুদ্ধ করছে তাদের বই কেনার জন্য।যুবকদের টি-শার্টে দেখা যায় বিধর্মীদের অমিয় বাণী। এসব বিষয়ে এখনি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতের জন্য আমরা দায়ী থাকবো।
এসব ক্ষেত্রে আমাদের মূল সমস্যা হল স্পন্সর।এর সমাধান হিসেবে আমরা মহল্লায় মহল্লায় কিছু নিবেদিতপ্রান সেচ্ছাসেবকদল গঠন করতে পারি যারা একাধারে সামাজিক কাজ যেমনঃএলাকার পরিচ্ছন্নতার কাজ,বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি,নগরীর শোভাবর্ধন সহ বহুমাত্রিক সেবায় নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্পন্সর যোগাড় করবে।বিলবোর্ড, দেওয়াল সহ বিভিন্ন যানবাহনে লিখা ধর্মীয় বানীগুলোর নিচে সৌজন্যে ঐ স্পন্সরদের নাম থাকবে,যাতে করে তাদের বিজ্ঞাপনের কাজটাও হয়ে যায়।নবী (সঃ) বলেনঃ-

"ما بال أقوام لا يفقّهون جيرانهم.ولا يعلّّمونهم ولا يعظونهم ولا يأمرونهم ولا ينهونهم ..........والله! ليعلّمنّ أقوام جيرانهم ويفطّنونهم و يفقّهون جيرانهم.و يعلّّمونهم و يعظونهم و يأمرونهم و ينهونهم .......او لأعاجلنّهم بالعقوبة فى دار الدنيا." (كنز العمّال:ص=683)

আভ্যন্তরীণ মিডিয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে "তাবলীগ জামাত"।আমরা যদি আমাদের এ আলোকস্তম্ভটিকে আরো বিস্তৃত পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারি কল্যাণময় সমাজ গঠন দুঃসাধ্য নয়।বিশেষত আমাদের দেশে অপরাধীরা জেলে যাওয়ার পর আরো হিংস্র ও উগ্র হয়ে ফিরে আসে, এক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে আমাদের তাবলীগ যদি কয়েদীদের জন্য কারাগারে কারাগারে মারকায গঠন করে সমাজের অপরাধ-জগত অবলুপ্ত হতে বেশি দেরী লাগবেনা।

সংবাদপত্র জগতে মাসিক পত্রিকায় আমরা অনেকটা সফল হলেও দৈনিক পত্রিকার বলয়ে আমরা একেবারেই আনাড়ি বললে ভুল হবেনা।এছাড়া রেডিও শিল্পে আমাদের পশ্চাতগামিতা জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারে।চারুকলার বিপরীতে আমরা ইসলামী ক্যালিগ্রাফীকে যথেষ্ট সারবজনীন করে তুলতে পারিনি।সংবাদপত্রের বিষয়ে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তা সত্ত্বেও আমাদের অবহেলায় অনেক সময় নষ্ট হয়েছে বলে স্বীকার করতে হয়।

আল্লামা মুফতী ত্বকী উসমানী পত্রিকা ও সাংবাদিকতা নিয়ে অনেক নিয়ম-বিধি আলোচনা করেছেন।পত্রিকা পরিচালনার ক্ষেত্রে ছবি তোলা ও বিজ্ঞাপন একটি গুরু সমস্যা।এক্ষেত্রে আমরা যেকোন দৃশ্যের ছবি দূর থেকে এমনভাবে নিতে পারি যাতে ব্যাপারটা উন্মোচনও হবে শরিয়তের বাঁধাও থাকবেনা।আর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবির বদলে তাদের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা যেতে পারে।

মোটকথা,ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।আমরা অনেকসময় সামাজিক বন্ধন অটুট রাখতে ধর্মীয় কৌশল অবলম্বন করি,ইসলামের প্রচার করতে তা গ্রহণ করা কি আরো বেশি উচিত নয়?যেহেতু ইসলামই সমাজ গঠনের মূল কারিগর।
বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে আমারা কিছু বিজ্ঞাপন-কেন্দ্র সংযোজন করতে পারি পত্রিকা অফিসে,যেখানে বিজ্ঞাপন আইডিয়াবাজরা থাকবে, যারা বিজ্ঞাপন দাতাদের বিনামূল্যে অশ্লীল বিজ্ঞাপনের পরিবর্তে সুন্দর ও কল্যাণময় বিজ্ঞাপনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
এছাড়া দেশীয় মিডিয়া ব্যবস্থায় সিনেমা-হল গুলোর বিকল্প স্বরূপ বিভিন্ন আকারের পাঠাগার,ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী,ইসলামী থিয়েটার, নভোথিয়েটার, প্রত্নতাত্ত্বিক ও আকাবিরদের জীবন সম্বলিত জাদুঘর নির্মাণ করাটা সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে।

দেশে বেঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে 'মানবাধিকার সংস্থা', অথচ ইসলামের যারা পুরোধা,যারা ঈমানের বাহক তারাই এর সবচেয়ে বেশি হকদার!এছাড়া একটি সার্বজনীন "ফিকাহ একাডেমী" ও সর্বজনবিদিত "হালাল পরিক্ষাগার"নির্মাণের সময় বয়ে যাচ্ছে।নবী করিম (সঃ) বলেছেনঃ- 

" إنّ الدين بدأ غريباً. وسيعود كما بدأ.فطوبى للغرباء. وهم الذين يُصلحون ما أفسد الناسُ من بعدى من سنّتى "

আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বিষয়টি অনেক দীর্ঘ,তবে সবচেয়ে জরুরী হয়ে পড়েছে ওয়েবসাইট ও স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।এসব সুক্ষ বিষয়ে নিয়ন্ত্রন গ্রহণ করতে তাবলীগ জামাতের মতো সুনির্দিষ্ট পারদর্শী গ্রুপ নিয়ে নেমে যেতে হবে।এছাড়া 'ওআইসি'র মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলোকে জাতিসঙ্ঘ এবং ন্যাটোর মতো রূপ দিলে আমাদের অবস্থান আরো দৃঢ় হবে বলে বিশ্বাস।
এসব উল্লেখিত উপাদান ছাড়াও বিশব-মিডিয়ার এমন আরো উপাদান আছে যা সচরাচর আমাদের দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায়... উদাসীনতা বাদ দিয়ে একই প্লাটফরমে মিলিত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় পার হতে চলেছে,আমাদের আরো গাফলতির শেষপ্রান্তে কাফফারা দিয়েও ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া সম্ভব হবেনা।কবি বলেনঃ-
শুধু খেয়ালের বশে,আমাদের ভুলে
দরিয়া অথই ভ্রান্তি নিইয়াছি তুলে
আমাদের ভুলে মুসাফির দল পানির কিনারে বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিইয়াছে তাদের সিতারা-শশি।।


ইসলামী মিডিয়ার একটাই উদ্দেশ্য, সমাজমানসের পরতে পরতে নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসন এমনভাবে বিছিয়ে দেওয়া যাতে সাধারন জনগনই অন্যায়-অশ্লিলতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে।এ মিডিয়ার লক্ষ্য দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তর নবীযুগের "সোনালী মদীনা"র ছাঁচে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো।একমাত্র তখনি আমরা এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারব.

 " كنتم خير أمّة اُخرجت للناس ...... "

আরো পড়ুন -